বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:০১ অপরাহ্ন

মোহামেডানের জার্সিতে সোলেমান দিয়াবাতের ১০০ গোল

টি আর স্পোর্ট বিডি
প্রকাশ বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫
সোলেমান দিয়াবাতে

বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড একটি নাম, যা ঐতিহ্য, গৌরব এবং সমর্থকদের অকুণ্ঠ ভালোবাসার প্রতীক। এই ক্লাবের কালো-সাদা জার্সি গায়ে মাঠে নেমে অসংখ্য ফুটবলার সৃষ্টি করেছেন অমর কীর্তি। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে মালিয়ান ফরোয়ার্ড সোলেমান দিয়াবাতে এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের হয়ে একটি অসাধারণ মাইলফলক অর্জন করেছেন—১০০ গোলের ঐতিহাসিক রেকর্ড। এই কৃতিত্ব তাকে বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান এনে দিয়েছে এবং মোহামেডান সমর্থকদের মনে নতুন করে উদ্দীপনা জাগিয়েছে।

মোহামেডানের গোল মেশিন সোলেমান দিয়াবাতে, মালি থেকে উঠে আসা এই গোল স্কোরার, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) মোহামেডানের হয়ে খেলতে এসে দ্রুতই সমর্থকদের মন জয় করেন। তার দুর্দান্ত গতি, নিখুঁত ফিনিশিং, এবং গোলের সামনে অসাধারণ স্থিরতা তাকে মোহামেডানের আক্রমণভাগের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত করে।

দিয়াবাতে শুধু গোল স্কোরারই নন, তিনি মাঠে তার সতীর্থদের জন্যও সুযোগ তৈরি করে দেন, যা মোহামেডানের খেলার ধরনকে আরও গতিশীল করে।২০২১-২২ মৌসুমে তিনি বিপিএল-এ সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জিতেছিলেন, যা তার গোল করার ক্ষমতার প্রমাণ। এরপর থেকে তিনি প্রতি মৌসুমে ধারাবাহিকভাবে গোল করে যাচ্ছেন। তার খেলার ধরন এতটাই প্রভাবশালী যে, প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের জন্য তিনি একটি দুঃস্বপ্ন।

মোহামেডানের হয়ে ১০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করার মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন, তিনি কেবল একজন বিদেশি খেলোয়াড় নন, বরং মোহামেডানের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

সোলেমান দিয়াবাতের ১০০ গোলের মাইলফলক শুধু একটি সংখ্যা নয়, এটি তার কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং মোহামেডানের প্রতি তার অঙ্গীকারের প্রতিফলন। এই গোলগুলো এসেছে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়—বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ, ফেডারেশন কাপ, ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপ এবং অন্যান্য টুর্নামেন্টে। তার গোলের মধ্যে রয়েছে হ্যাটট্রিক, দূরপাল্লার শট, পেনাল্টি, ফ্রি-কিক এবং গোলের সামনে দুর্দান্ত ফিনিশিং।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৩ সালে ফেডারেশন কাপে তিনি হ্যাটট্রিকসহ চার গোল করে মোহামেডানকে জয় এনে দিয়েছিলেন, যা তার গোল করার অসাধারণ ক্ষমতার প্রমাণ।

তার ১০০তম গোলটির পর মাঠে উপস্থিত সমর্থকদের উল্লাস এবং সতীর্থদের উদযাপন ছিল এই কৃতিত্বের গুরুত্বের প্রমাণ।

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি বাংলাদেশের অন্যতম সফল ফুটবল ক্লাব। ১৯৫৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ক্লাবটি ঢাকা লিগে ১৯ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তবে, পেশাদার লিগের যুগে মোহামেডান শিরোপার জন্য লড়াই করলেও সাফল্য কিছুটা সীমিত ছিল। এমন সময়ে সোলেমান দিয়াবাতের আগমন ক্লাবের জন্য নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে এসেছে। দিয়াবাতের ১০০ গোল কেবল তার ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়, এটি মোহামেডানের পুনর্জাগরণেরও একটি প্রতীক।

২০২৩ সালে ফেডারেশন কাপ জয়ের মাধ্যমে মোহামেডান ১৪ বছর পর শিরোপা জিতেছিল, এবং এই সাফল্যে দিয়াবাতের অবদান ছিল অপরিসীম। তার গোলগুলো শুধু ম্যাচ জিতিয়েছে তাই নয়, সমর্থকদের মনে নতুন করে আশা জাগিয়েছে।

মোহামেডানের সমর্থক গোষ্ঠী দিয়াবাতেকে তাদের হৃদয়ে স্থান দিয়েছে। তার প্রতিটি গোল সমর্থকদের জন্য উৎসবের মতো। স্টেডিয়ামে তার নামে স্লোগান, সামাজিক মাধ্যমে তার প্রশংসা এবং জার্সি বিক্রির জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে তিনি কতটা প্রিয়। দিয়াবাতের এই কৃতিত্ব সমর্থকদের মধ্যে ক্লাবের প্রতি ভালোবাসাকে আরও গভীর করেছে।

১০০ গোল অর্জন সহজ ছিল না। ভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষার বাধা, এবং প্রতিযোগিতামূলক লিগে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের চাপ দিয়াবাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তবু, তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ভবিষ্যতে তার লক্ষ্য হতে পারে আরও গোল করা এবং মোহামেডানকে বিপিএল শিরোপা এনে দেওয়া।

সোলেমান দিয়াবাতের মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ১০০ গোল বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে একটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা অধ্যায়। এই কৃতিত্ব তার প্রতিভা, পরিশ্রম এবং মোহামেডানের প্রতি তার ভালোবাসার প্রতিফলন। তিনি শুধু একজন গোল স্কোরার নন, তিনি মোহামেডান সমর্থকদের স্বপ্নের প্রতীক।

এই মাইলফলক বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের জন্য একটি উদযাপনের মুহূর্ত এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা। সোলেমান দিয়াবাতের এই যাত্রা এখানেই শেষ নয়—তার জার্সিতে আরও অনেক গোল যোগ হবে, এবং মোহামেডানের গৌরবময় ইতিহাসে তার নাম চিরকাল উজ্জ্বল থাকবে।


এই ক্যাটাগরির আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর