সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে লড়াই করে ২-১ গোলে হারলো বাংলাদেশ

২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর রাকিবের গোলে ব্যবধান কমালেও তার একাধিক মিসে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ২-১ গোলের পারাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো বাংলাদেশ। এই ম্যাচকে ঘিরে বাংলাদেশের ফুটবলে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছিলো পরাজয়ের কারণে গ্যালারি থেকে হতাশা নিয়েই ফিরলেন নতুন করে স্বপ্ন দেখা দেশের ফুটবল প্রেমীরা।
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে র্যাঙ্কিংয়ে ২২ ধাপ পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ এই ম্যাচে লড়েছে বুক চিতিয়ে। হামজা চৌধুরী, সামিত সোম, ফাহমিদুল ইসলামদের সংযোজনের পর নতুন বাংলাদেশের প্রথম বড় অ্যাসাইনমেন্ট ছিল সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচটা। ম্যাচে হারলেও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে চোখে চোখ রেখে লড়েছে হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার দল। তবে হামজা-সামিতদের আগমনেই যে বাংলাদেশের ফুটবলের চিত্রটা সহজে পাল্টাচ্ছে না সে বাস্তবতাও দেখলেন দেশের ফুটবলার-কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সমর্থকরাও।
ম্যাচে বাংলাদেশের ফুটবলাররা একের পর এক ভুল করেছেন যার খেসারত দিতে হয়েছে ম্যাচ হেরে গিয়ে। প্রথমার্ধে ফলাফল ছিল সিঙ্গাপুরের পক্ষে। যদিও বাংলাদেশ লড়েছে সমানতালে। ম্যাচে বাংলাদেশ একাধিকবার সুযোগ মিস করেছে। ম্যাচে শামিত সোমের বেশ কয়েকটি পাস ১০ নাম্বার জার্সিধারি রাকিব কাজে লাগাতে পারেননি। একদিকে যেমন গোল মিস করেছে অন্যদিকে প্রথম গোলটাও হজম করতে হয়েছে নিজেদের ভুলে।
ম্যাচের ৪৩তম মিনিটে বাম প্রান্ত থেকে সিঙ্গাপুরের আক্রমণ বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতুল মারমা পোস্ট থেকে বেরিয়ে আসলেও বল পুরোপুরি গ্রিপ করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত গোলই হজম করতে হয় তপু বর্মণ বাহিনীকে। শেষ মুহুর্তে হামজা চৌধুরী গোল লাইন থেকে ক্লিয়ারের চেষ্টা করেছিলেন।
এর আগে ম্যাচের ১৫তম মিনিটে শাকিল আহাদ তপু একক প্রচেষ্টায় ডান প্রান্ত দিয়ে সিঙ্গাপুরের ডি বক্সে ঢুকে যান। তার বাড়ানো বলে রাকিব পা ছোঁয়ালেও বল জালে পাঠাতে পারেননি। ৩৩ মিনিটে ফাহমিদুলকে বক্সের সামনে ফেলে দিলে বাংলাদেশ ফ্রি কিক পায়। হামজার নেয়া ফ্রি কিক অল্পের জন্য পোস্টের ওপর দিয়ে যায়। এর ছয় মিনিট পর অর্থাৎ ৩৯তম মিনিটে সামিতের বাড়ানো বলে ফাহমিদুল সিঙ্গাপুরের একজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোলে শট নেন। কিন্তু নিলেও ব্লক হয়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সিঙ্গাপুরের আক্রমণের বিপরীতে বাংলাদেশের অবস্থা ছিলো নড়বড়ে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে সিঙ্গাপুর আরও এক গোল তুলে নেয়। ৫৭তম মিনিটে মাঝমাঠ থেকে শামি হাইসিনের জোরালো শট ঠেকিয়েই দিয়েছিলেন মিতুল মারমা। ফিরতি বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি ইখসান ফান্দি।
দুই গোল হজম করা বাংলাদেশ ৬৭ মিনিটে ব্যবধান কমায়। একাধিক সুযোগ নষ্ট করা রাকিব গোল করেছেন হামজা চৌধুরীর অ্যাসিস্ট থেকে। ইংল্যান্ড প্রবাসী এই ফুটবলারের থ্রু পাস থেকে গোল করে স্টেডিয়ামের দর্শকদের আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দেন।
ম্যাচের ৮০ মিনিটের পর টানা চারটা কর্নারও আদায় করে নিলেও আর গোল পায়নি বাংলাদেশ। ফলে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে শুরু করলেও সঙ্গী হয়েছে পরাজয়।
এদিকে, এশিয়ান কাপ ফুটবলের বাছাইয়ে সি গ্রুপের অন্য ম্যাচে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়েছে হংকং। হংকং ও সিঙ্গাপুরের প্রথম ম্যাচটি ড্র হয়েছিলো। বাংলাদেশও ড্র করে ভারতের বিপক্ষে। দুই ম্যাচ শেষে একটি করে জয় ও ড্র থেকে চার পয়েন্ট নিয়ে যথাক্রমে টেবিলের প্রথম ও দ্বিতীয়স্থানে সিঙ্গাপুর ও হংকং। বাংলাদেশ আছে টেবিলের তিনে। গোলপড়ে পিছিয়ে টেবিলের চারে ভারত।
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ২০১৫ সালের ৩০ মে জাতীয় স্টেডিয়ামে সর্বশেষ ম্যাচে ২-১ গোলে হেরেছিলো বাংলাদেশ। এবারও হারলো সেই একই ব্যবধানে। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি ম্যাচে তিন ম্যাচ খেললো বাংলাদেশ। প্রথম দেখায় ড্র করেছিলো লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এর পরের দুই দেখাতেই হারলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ একাদশ:
মিতুল মারমা, তপু বর্মণ (অধিনায়ক), তারিক কাজী, সাদ উদ্দিন, শাকিল আহাদ, হামজা চৌধুরী, শমিত সোম, মোহাম্মদ হৃদয়, ফাহমিদুল ইসলাম, শাহ কাজেম, রাকিব হোসেন।